বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩, ১০:১৫ পূর্বাহ্ন
Title :
পরিবেশ মেলা ও বৃক্ষ মেলা ২০২৩ এ পাখিদের জন্য মানুষের হাতে তৈরি বাসা নিয়ে এসেছে উদ্দীপন হেরেমখানায় চলতো অনৈতিক ও অসামাজিক কার্যকলাপ উত্তরা ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেষ্টমেন্ট লিঃএর সাবেক এমডি এস এম শামসুল আরেফিন সহ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে দুদক উপজেলা পরিষদ নিয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ এশিয়ার লৌহমানবী শেখ হাসিনা: দ্য ইকোনমিস্ট আগামী জাতীয় নির্বাচন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠ হবে : প্রধানমন্ত্রী সীমান্ত হত্যা বন্ধে বিজিবিকে আরো তৎপর হতে রাষ্ট্রপতির আহ্বান ঈদ পূর্ণমিলনী অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা প্রেসক্লাবের নির্মাণাধীন বাড়ির লিফটের পানিতে বাচ্চার লাশ বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম ইলিয়াস আহম্মেদ চৌধুরী (দাদা ভাই) এর ৩২ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালন

গৌরব ও অহংকারের অমর একুশের চেতনা কি আমরা ধরে রাখতে পারছি

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ৩০০ Time View

নিউজ এবিসি : নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা কী হবে- এ নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছিল ভারত ভাগের আগেই। মৌলিক অধিকার রক্ষায় বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবিতে প্রথম শুরু হয় এ আন্দোলন। এছাড়া, সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও ভাষাগত দিক থেকে মৌলিক পার্থক্য ছিল। এসব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণদাবির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে।

১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান ও ভারত নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তানের দুটি অংশ পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান। সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও ভাষাগত দিক থেকে ব্যবধান ছিল পাহাড়সম।

১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করে যে, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’। পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে আরবি হরফে বাংলা লিখন অথবা সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা আরবি করারও প্রস্তাব দেয়া হয়। এ ঘোষণায় পূর্ব বাংলার বাংলাভাষী সাধারণ জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম নেয়। ফলস্বরূপ বাংলাভাষার সম-মর্যাদার দাবিতে পূর্ব বাংলায় আন্দোলন দ্রুত দানা বেঁধে ওঠে। আন্দোলনকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে এবং সে সঙ্গে ঢাকা শহরে মিছিল, সমাবেশ বেআইনি ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এসময় নিহত হন রফিক, সালাম, এম. এ. ক্লাসের ছাত্র বরকত ও আব্দুল জব্বারসহ আরও অনেকে। আহত হন ১৭ জন ছাত্র-যুবক। শহীদদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে ওঠে। শোকাবহ এ ঘটনা সমগ্র পূর্ব বাংলায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্র, শ্রমিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও সাধারণ জনতা পূর্ণ দিবস হরতাল পালন করে এবং সভা-শোভাযাত্রা ও মিছিলের মধ্য দিয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে শহীদ হন শফিউর রহমান শফিক, রিকশাচালক আউয়াল এবং অলিউল্লাহ নামক এক কিশোর। ২৩ ফেব্রুয়ারি ফুলবাড়িয়ায় ছাত্র-জনতার মিছিলেও পুলিশ অত্যাচার-নিপীড়ন চালায়। এ নির্লজ্জ, পাশবিক, পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ভাষা আন্দোলনের শহীদ স্মৃতিকে অম্নান করে রাখার জন্য মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে স্বল্প সময়ের মধ্যেই ছাত্ররা স্থাপন করেন শহীদ মিনার। পরের দিনই ২৪ ফেব্রুয়ারি এ শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন শহীদ শফিউর রহমানের পিতা।

ক্রমবর্ধমান গণআন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় এবং ১৯৫৪ সালের ৭ মে পাকিস্তান গণপরিষদে ‘বাংলা ভাষা’ অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গৃহীত হয়। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রণীত হলে ২১৪ নং অনুচ্ছেদে বাংলা ও উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা প্রবর্তিত হয়। সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৭ সালে বাংলা ভাষা প্রচলন আইন জারি করে।

১৯৫২ সালের পর থেকে ২১শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগকে স্মরণ করে দিনটি উদযাপন করা হয়।

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে। এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনকে একটি মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করে।

মাতৃভাষার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগ- এ স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে মর্যাদার আসনে আসীন হলেও এর রয়েছে ভিন্ন চিত্র। যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ভাষার প্রতি নেই কোন অনুরাগ। এরই ধারাবাহিকতায় শুরু হয়েছে মাতৃভাষাকে অবমাননা করে পথচলা।

১৯৯৯ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হলে বাংলাদেশ সরকার একটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ভবনের শুভ উদ্বোধন করেন। এর প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই ছিল দেশে ও দেশের বাইরে বাংলা ভাষার প্রচার ও প্রসারে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচিতি পত্রটি লেখা ছিল ইংরেজিতে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ‘ইনস্টিটিউট’ ও ‘বাংলা একাডেমি’র ‘একাডেমিতে’ও ব্যবহার করা হয়েছে ইংরেজি শব্দ। চলছে ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২২’। ‘স্টল বুকিং’ বা ‘স্টল নম্বর’ সর্বত্রই ইংরেজি ভাষার বিচরণ। বাংলা একাডেমি এর কোন যুৎসই বাংলা খুঁজে পায়নি নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে বিদেশি ভাষাকে স্থান দিয়েছে?

অনাদরে-অবহেলায় আমাদের প্রাণের ভাষা বাংলা। এ কারণে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্কুল-কলেজে গুরুত্বসহকারে পড়ানো হচ্ছে না বাংলা। বাংলা পাঠ্যবইয়ের গল্প পড়া ও কবিতা পড়ার আগ্রহ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেই। কারণ সৃজনশীল প্রশ্নে উত্তর দেয়ার জন্য পড়তে হয় কবি পরিচিতি ও গল্পের সারমর্ম। শিক্ষকদেরও নেই মাথাব্যথা। নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যবই ‘বাংলা সাহিত্য’। এ বইয়ে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রবন্ধ  ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্ বোধন’। দেখে খটকা লাগলো। অনেকক্ষণ ঘাঁটাঘাঁটির পর বিরক্ত হয়ে ফোন দিলাম এনসিটিবিতে কর্মরত আমার বন্ধুকে। আমার বন্ধুটিও এবার গেল চটে। কিন্তু কী উপায়? তখন রাত প্রায় ৯টা। ধৈর্য না রাখতে পেরে ফোন দিলাম এনসিটিবি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব প্রফেসর মহিউজ্জামানকে। একটু ইতস্তত বোধ করলাম। একদিকে রাত অন্যদিকে চিন্তা উনি যদি ফোন না ধরেন। সব চিন্তার অবসান হলো। ভদ্রলোক দ্রুতই ফোনটি তুললেন এবং অপরদিকের গলার আওয়াজটি বিস্মিত করার মতো। অত্যন্ত শ্রুতিমধুর। তাই সাহস নিয়ে ‘স্যার’ সম্বোধন করে পরিচয় দিলাম আমি দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর অভিভাবক। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রবন্ধ ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্ বোধন’ পড়াতে গিয়ে আমার কাছে অসঙ্গতি ও খটকা লাগলো বাংলার এতো অধঃপতন কীভাবে হলো? অপরদিকের প্রশ্ন-কেন বলুন তো! জবাবে বললাম, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রবন্ধ ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’-এর ‘উদ্ বোধন’ যুক্তাক্ষরে না হয়ে ভাঙা কেন? হওয়ার কথা তো ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’। বুঝিয়ে বলার পরে বললেন বাচ্চাদের সুবিধার্থে। বাচ্চারা কী যুক্তাক্ষর বোঝে না যে ওদের এতো সহজ করে শেখাতে হবে? উনি যতো সহজে বিষয়টি নিয়েছেন আমি সেভাবে নিতে পারিনি। উল্টো প্রশ্ন করলাম- যদি কিছু মনে না করেন আমি আপনার কাছে জানতে চাই বিখ্যাত লেখক-প্রবন্ধকার-গল্পকার যেমন : শরৎ চন্দ্র, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম এঁদের লেখায় আমরা হাত দিতে পারি? মনে হলো একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন। পরক্ষণেই বোঝানোর চেষ্টা করলেন ‘হ্যাঁ, পারা যায়’। আমাদের বাচ্চারা অনেক ট্যালেন্টেড। ওরা গণিত অলিম্পিয়াড, ফিজিক্স অলিম্পিয়াডসহ বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অংশগ্রহণ করছে। চিন্তা করবেন না বাচ্চারা সব কাটিয়ে উঠবে। কাটিয়ে উঠবে ঠিকই কিন্তু গোড়ায় গলদ কে সারাবে? এনসিটিবি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয়ের জ্ঞাতার্থে আরো একটি তথ্য দিতে চাই। নবম ও দশম শ্রেণির ‘বাংলা সাহিত্য’ পাঠ্যবইয়ে আবদুল হাকিমের ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় ‘পাঠ-পরিচিতি’র দ্বিতীয় লাইনে ‘বলিষ্ট’ শব্দটি লেখা আছে। কিন্তু হবে ‘বলিষ্ঠ’। এখানে আমি বলবো ভাষার প্রতি দরদ, ভালোবাসা ও দায়িত্ব তো নেই বরং আমার কাছে মনে হয়েছে শ্রীমান (এনসিটিবি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব প্রফেসর মহিউজ্জামান) অত্যন্ত উদাসীন। জানি না ভাষার মাসে ওনার বিবেক ওনাকে দংশন করে কি-না বা বাংলাকে বুকে ধারণ করেন কি-না!

বাংলা ভাষাকে অবমাননা করার এরকম অনেক চিত্র রয়েছে। ফোন দিয়েছিলাম মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব-এঁর ৯১তম জন্মবার্ষিকীর পোস্টারে ছেয়ে গেছে ঢাকা শহর। মন্ত্রণালয়ে ফোন করার পরে এক ভদ্রলোক ফোন ধরলেন। নিশ্চিত হলাম ঠিক জায়গায়ই ফোন দিয়েছি। জিজ্ঞেস করলাম ভাই বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব-এঁর ৯১তম জন্মবার্ষিকীর পোস্টারে লেখা ‘মুজিব-এঁর’ এই ‘এঁর ’ কেন এভাবে লেখা। এটি বাংলা অভিধানের কোথায় আছে? যদিও বাংলা একাডেমির বানানের এখন যে হাল তাতে বাংলাকে এক প্রকার স্বর্গেই পাঠিয়েছে। কী সহজ বাংলা!!! বললেন, সংশ্লিষ্ট মহলকে বিষয়টি অবহিত করবো।

আমি সকল পাঠককে অনুরোধ করবো বেশি দূর যেতে হবে না। ঘুরে আসুন মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে। যেমন : ফটোগ্যালারি ও বিবিধ তথ্য : জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল। ফটোগ্যালারির শুরুতেই দেখবেন ‘আর্ন্তজাতিক নারী দিবস ২০২০ উপলক্ষ্যে সমাবেশ’, ‘স্বাধীনাতা দিবস’- এরকম অজস্র ভুল লেখা। যেখানে বাংলা ভাষার যত্নের ছোঁয়া নেই। এছাড়া বিবিধ তথ্য : জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল- শুরুতেই ‘শুদ্ধাচার রির্পোট’। অথচ পত্রিকা খুললেই দেখি অমুক পেয়েছেন শুদ্ধাচার পুরস্কার। এগুলোর উচ্চারণইবা কী হবে? এদিকে, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি অফিস ও অফিসের বাইরে ব্যবহারের জন্য যে কাগজটি ব্যবহার করছে সেখানে লেখা ‘৮, শহীদ সংবাদিক সেলিনা পারভিন সড়ক, গুলফেশা’। একজন ডেপুটি ডিরেক্টরকে ফোন করে বিষয়টি অবহিত করেছি। বিষয়টি দেখবেন। সরকারি পর্যায়ে বাংলা ভাষা ব্যবহারের একি হাল? কে দেখবে?

আশ্চর্যের বিষয় হলো-অক্টোবর ১৮, ২০২০ সালে একটি প্রেস রিলিজ বাংলা ট্রিবিউন ছাপিয়েছে, ‘মাত্রিভাষা ইনস্টিটিউট’। বাংলা ভাষার প্রতি এ কী ধরনের আচরণ? এই মেরুদণ্ডহীন জাতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস পালন করে একদিন। ২৬ মার্চ ও ১৬ই ডিসেম্বর পালন করে একদিন। সারা বছরে কোন খবর থাকে না। শহীদ মিনারে চলছে ধোয়া-মোছার কাজ। ২২শে ফেব্রুয়ারি থেকে চলবে আবার আগের মতোই।

ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২২ইং তারিখে রাত ১১:০০টার সংবাদ দেখছিলাম একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে। হায় হায়! মাথায় হাত। বাংলা উচ্চারণ ইংরেজির মতো করে। অবাক কাণ্ড ‘মুখোপাধ্যায়’কে পড়ছে ‘মুখ্যপাধ্যায়’। এরকম সহস্র ভুল উচ্চারণে সংবাদ পাঠিকা সংবাদ পড়ে যাচ্ছেন। কী মেধা, কী সংস্কৃতি?? বাঙালি জাতি।

আমরা যখন তারিখ-বছর লিখি সেখানেও ইংরেজি মাস ও সন। এটা তো সর্বজন স্বীকৃত। ভাষার জন্য এতো আন্দোলন, বুকের তাজা রক্ত কী কেবলই বৃথা! কেন ডুবে যাচ্ছি আমরা অন্য কোথাও। নিজেদের প্রতি আমরা কেন যত্নশীল নই। কেন পশ্চিমাদের প্রতি এতো আকর্ষণ। অনুভব ও অনুরাগের ছোঁয়া দিয়ে দেখি না আমরা অন্যদের মাঝে নিজেকে খুঁজে পাই কি-না!

ভাষা একটি জাতির গর্বের ও অহঙ্কারের। আর সে ভাষা যদি লড়াই করে ও বুকের তাজা রক্ত দিয়ে অর্জন করতে হয়, তার প্রতি থাকবে গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আবেগ। বাংলা আমার মায়ের ভাষা, প্রাণের ভাষা। অথচ ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য এখনো চলছে সংগ্রাম। দীর্ঘ ৬৯ বছর পরও সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালুর বিষয়টি কতটুকু বাস্তবায়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এ বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি কোন্ দিকে?

আর যদি এর থেকে পরিত্রাণ না মেলে তাহলে কী ধরে নেব ‘জানা সত্যি হলেও বোঝাটা ভুল’।

লেখক : শ্যামা সরকার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ও প্রধান কমিউনিকেশন, পাবলিকেশন অ্যান্ড রিসার্চ প্রধান কার্যালয়, উদ্দীপন। 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © newsabcbd  
Design & Developed by: A TO Z IT HOST
minhaz